নিজস্ব প্রতিনিধি,পি এম নিউজ:
উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষ যখন ব্যাংক ব্যালান্স জমিয়ে গাড়ি আর বাড়ি কেনার কথা ভাবে, এই তথাকথিত ‘অর্ধশিক্ষিত’ মানুষটি তখন জমানো টাকায় তৈরি করেন স্কুল। একটা-দুটো নয়, মোট ন’টি স্কুল খুলেছেন তিনি। প্রাথমিক, জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল তৈরির পর এখন ৮২ বছরের আহমেদ আলি একটি কলেজ তৈরি করার স্বপ্ন দেখেন।
বাংলাদেশের সীমান্তে ঘেঁষা প্রত্যন্ত গ্রামের এই রিক্সাওয়ালার নাম আহমেদ আলি। পরিবার বলতে, স্ত্রী আর তিন ছেলে।
কখনও মাটি কেটেছেন, কখনও অন্যের খেতে মজুর খেটেছেন। শেষ পর্যন্ত রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। নিজে স্কুলে যেতে পারেননি। অর্থের অভাবে স্কুল ছাড়তে হয়েছে অনেক আগেই। পাথারকান্দি থেকে করিমগঞ্জে শহরে গিয়ে রিকশা চালাতেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সেখানকার ছাত্রদের দেখে ভাবতাম, স্কুল থাকলে আমার গ্রামের ছেলেমেয়েরাও তো পড়াশোনা করতে পারত।’’ যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। স্ত্রী ফাতইর বিবির সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের তিন বিঘা জমি স্কুলের নামে লিখে দেন।
গ্রামের মানুষ শিক্ষক জোগাড় করেন। দিনে রিকশা চালিয়ে আহমেদ আলি রাতে সবাইকে নিয়ে মাটির দেওয়াল গাঁথতে থাকেন।১৯৭৮ সাল চালু হয় সেই স্কুল। দু’বছরের মধ্যে সরকার সেই ‘আহমেদ আলি এমই স্কুল’ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্যত্র। নিম্ন প্রাথমিক স্কুল না থাকলে এই স্কুলে ছাত্র আসবে কোথা থেকে। ফের এগিয়ে আসেন আহমেদ আলিই। আশপাশের গ্রামে তিনটি নিম্ন প্রাথমিক স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেন তিনি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জমির ব্যবস্থা করেন। ছাত্র বাড়তে থাকায় ওই সব স্কুল চত্বরেই আরও তিনটি স্কুলও খোলা হয়। তারপর, দরকার হলো আরো একটি হাইস্কুলের। এ বারও এগিয়ে আসেন সেই আহমেদ আলিই। নিজের বাকি জমিটুকুও হাইস্কুলের জন্য লিখে দেন। ২০১১-য় ৪টি স্কুলই সরকার অধিগ্রহণ করে।